কালেরকন্ঠ :

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিজ দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, নিপীড়ন ও দেশ থেকে বিতারণের ধারাবাহিকতায় গতকাল (শুক্রবার) তাদের একটি সামরিক হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে।

এ ঘটনার জের ধরে কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনা ও নৌ বাহিনী মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মহড়া শুরু করেছে- শনিবার (ঈদের দিন) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ ধরনের গুজব-গুঞ্জন অনেককেই আগ্রহী করে তোলে।

‘বাংলাদেশ নেভি অফিসিয়াল’ নামের ওই ফেসবুক পেজ-এ জানানো হয়, সকালে ঢাকা থেকে ৪টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কক্সবাজারের দিকে উড়ে গেছে। এছাড়া সঙ্গে আরও রয়েছে এফ-৭ যুদ্ধবিমানও। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ৯টি যুদ্ধজাহাজ (বিএনএস বঙ্গবন্ধুসহ) পরিপূর্ণ যুদ্ধ সাজে  মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে। এর আগে গতকাল (শুক্রবার) রাতেই প্রয়োজনীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সীমান্তে পাঠানো হয়েছে- এমন গুজব-গুঞ্জন নির্ভর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যত্র। তবে আইএসপিআর এসব খবরকে নিছক গুজ বলে জানিয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমের ওই ‘গুজবে’ আরও বলা হয়- বিমান বাহিনীর Mikoyan MiG-29, Chengdu f-7BG এবং Yakovlev Yak-130 বিমানগুলো লোডেড অবস্থায় কম্ব্যাক্ট এয়ার পেট্রোল (CAP) পারফর্ম করছে।

তবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ের সত্যতা জানা যায়নি। সামরিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীর সামরিক মহড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব এবং ভিত্তিহীন। তবে বছরের এ সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নিয়মিত মহড়া হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মহড়া দিচ্ছে।

এ বিষয়ে আইএসপিআর পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসানও সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মিয়ানমার সীমান্তে সেনা মোতায়েনের খবর সঠিক নয়।

এর আগে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ঢুকে পড়ার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।

শুক্রবার তিন দফায় মিয়ানমারের হেলিকপ্টার আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

সীমান্ত অঞ্চলের একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার মিয়ানমার বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণও করা হয়।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হাজার হাজার রোহিঙ্গা এখন আবারো বাংলাদেশে ঢুকতে উখিয়াসহ আশপাশের সীমান্তে জড়ো হয়েছে। এক হিসেব মতে, নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর সরকারি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এবার ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

অপরদিকে, বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়টি নজরে আসার পর কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসে ‘ডিপ্লোমেটিক নোট’ পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, এভাবে আকাশ সীমা লঙ্ঘন প্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয় এবং তা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করবে।

বাংলাদেশ যখন সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে মিয়ানমারকে সহায়তা করে আসছে, তখন এই ধরনের আচরণ নিজেদের পারস্পারিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতাকে ব্যাহত করবে।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়েছিল মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীরা।

বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে না দিলেও গত এক সপ্তাহে ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতি শান্ত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন সম্প্রতি।

এদিকে, ফেসবুকের যে পেজ থেকে ‘গুজব-গুঞ্জনের’ সূত্রপাত, সেটি শেষপর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুপুরের পর থেকে ওই পেজটি আর পাওয়া যায়নি।